ইফতার ও সেহরির ফজিলত: মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
রোজার মৌলিক অনুষঙ্গ ইফতার ও সেহরি। রমজান মাসে মুসলমানরা সারাদিন রোজা রাখার পর, সূর্যাস্তের সময় যে খাবার গ্রহণ করেন তার নাম ইফতার। খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা সুন্নত।
সেহরি আরবি সুহুর শব্দ থেকে নেওয়া। অর্থ- ঊষার পূর্বের খাবার। রমজানে অথবা বছরের যে কোনো দিন রোজা পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তার নাম সেহরি।
বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ তিরমিজি শরিফে বর্ণিত- রোজার মাসে রাসুল (স) মাগরিবের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুরের মাধ্যমে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুর। এর ব্যতিক্রম হলে কয়েক ঢোক পানিই ছিল রাসূলের (স) ইফতার।
হজরত আবদুল্লাহ বিন আবি আউফা (র) সূত্রে বর্ণিত- তিনি বলেন, রোজায় আমরা রাসূলের (স) সফরসঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বললেন, ছাতু ও পানি মিশিয়ে ইফতারি পরিবেশন কর। (মুসলিম- ১০৯৯)।
বিশ্বনবী মুহম্মদ (স) ইফতারে কত সাদাসিদে ছিলেন। খেজুর, ছাতু আর পানির ইফতার। সাদাসিদে এই ইফতারে রয়েছে তৃপ্তি। আছে অপরকে ইফতার করানোর সওয়াব।
চলমান বৈশি^ক এই মহামারীর সময়ে নিজ ঘরে শুধু ইফতারের মহাউৎসব নয়, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন কিংবা অসহায়দের খোঁজখবর রাখা উচিত।
নিজের ইফতার-সেহরির আয়োজন ছোট করে হলেও অভাবির জন্য ভাবা প্রয়োজন। ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হজরত রাসুল (স) বলেন, কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। ইফতারি প্রদানকারী একটি রোজার সওয়াব পাবেন অথচ রোজা পালনকারীর সওয়াব সামান্যও কমানো হবে না। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (স) আমাদের এমন সামর্থ্য নেই, যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি। তিনি বলেন, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দিবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটি শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তিসহ খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার হাউজে কাওসার থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে না পৌঁছা পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না। (বায়হাকি, মেশকাত : ১৭৪)
হজরত সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি (রা) সূত্রে বর্ণিত- মহানবী (স) বলেন, তোমরা খুরমা-খেজুর দিয়ে ইফতার করবে। তবে যদি সে খুরমা-খেজুর না পাও, তা হলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কারণ পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত- রাসুল (স) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, দুই. ন্যায়বিচারক বাদশাহের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। (আহমদ)
রাসলের (স) সেহরির কথা হযরত আবদুল্লাহ বিন হারেস এভাবে বলেন- এক রাতে রাসুল (স) সেহরি খাচ্ছিলেন, আমি তখন হুজুরের (স) নিকট পৌঁছলাম। তখ তিনি বলেন, তোমরাও সেহরি খাও। এতে আল্লাহ বিশেষ বরকত রেখেছেন। সেহরি পরিত্যাগ কর না। (নাসায়ি : ২১৬২)
রাসুল (স) সেহরিতে কী খেতেন? হজরত আনাস বলেন- সেহরির সময় রাসুল (স) বললেন- আমি রোজা রাখব, খাবার দাও। আমি রাসুলের (স) সামনে খেজুর ও পানি পরিবেশন করলাম। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরাইয়া বলেন, মুমিনের উত্তম সেহরি শুকনো খেজুর। (আবু দাউদ : ২৩৪৫)
বুখারি শরিফের হাদিসে আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত আছে- নবী করিম (স) বলেছেন, তোমরা সেহরি গ্রহণ কর, কেননা তা বরকতপূর্ণ খাবার।
রাসুল (স) বলেন, পানিমিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানির মাধ্যমে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দিবেন। আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়াবে আল্লাহ তাকে হাউজে কাউসার হতে এমন পানীয় খাওয়াবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত তৃষ্ণিত হবে না।
রোজায় ইফতার-সেহরির মাধ্যমে মানব জাতিকে পরোপকারে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে; উৎসাহিত করা হয়েছে নিঃস্বদের দানে। প্রকৃত রোজাদার নিজে ইফতার করবেন, অন্যকেও করাবেন। অসহায়-দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটাবেন।
লেখক : সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম