তোহফায়ে রামাদান : রমযানের মহত্ব ও গুরুত্ব

এম মিরাজ হোসাইন (ভোলা) :
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুন্দর জীবনব্যবস্থা যার নাম ইসলাম। ইসলামের মৌলিক ৫টি বুনিয়াদের মধ্যে রোযা অন্যতম। রোযা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর ; যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। ( সুরা আল বাকারা : ১৮৩)
রামাদান মাসের প্রধান উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। এই মাসটি আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হওয়া এবং তার সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার সুবর্ণ সুযোগ। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,রোযা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু রোযা আমার জন্য। তাই আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। ( হাদীসে কুদসী)
রোযার এই উপবাস ও কামনা বাসনা থেকে বিরত থাকা হলো আল্লাহভীতির একটি বহিঃপ্রকাশ যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বড় প্রচেষ্টা। আমরা সকলে চেষ্টা করবো জেনো রমযানের প্রতিটা সময় ইসলামের কাজে লাগাতে পারি।
যে ব্যক্তি রমযান মাস পেল অথচ গুনাহসমূহ মাফ করাতে পারলো না রাসূল (সঃ) তাকে হতভাগা বলেছেন।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের ওপর এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন।
এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শিকলবদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত’।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম : ১৫৫১)।
মাসব্যাপী রোজা পালন করে যদি তাকওয়া অর্জন করা না যায়, তা হলে এ রোজা অর্থহীন উপবাস ও নিছক আত্মপ্রবঞ্চনায় পর্যবসিত হয়। (মুসলিম: ২১৩৪)।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন– যে ব্যক্তি বাজে কথা ও কাজ ত্যাগ করল না, তার পানাহার ত্যাগ নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়’। (বোখারি: ১৮০৪)।
শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয়ে দিতে হবে সবক্ষেত্রে।
পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রোজাদারদের অপরিহার্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।