আইএমএফ থেকে ১-২ বিলিয়ন ডলার আনতে জান বের হয়ে যায়

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। সে তুলনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১-২ বিলিয়ন ডলার আনতেই জান বের হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আরো জানান, এ বছর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে গতকাল এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘নেভিগেটিং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স: মিডিয়া রিপোর্টিং’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ কর্মশালা যৌথভাবে আয়োজন করেছে পিকেএসএফ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৬০ জন সাংবাদিক অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্যোগ দুই ধরনের—প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট। মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পরিমাণও কম নয়। প্রকৃতির ক্ষতির বড় একটি অংশ মানুষের কারণে হচ্ছে। তাই সমস্যার মূল জায়গায় সমাধান আনতে হবে। দেশের বেশির ভাগ দুর্যোগ মানুষের তৈরি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। আমাদের দুটোই মোকাবেলা করতে হবে।’
তিনি সমালোচনা করে বলেন, ‘জলবায়ু নিয়ে কথাবার্তা হলেও কাজ কম হয়। কয়েকটি দেশ এটাতে টাকাই খরচ করে না।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এতই গুরুত্বপূর্ণ, যদি সঠিকভাবে কাজ না করি তাহলে ভবিষ্যতে প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। পটুয়াখালী, পাথরঘাটার মতো এলাকা এখনো সেভাবে নজরে আসেনি।
অর্থ উপদেষ্টার মতে, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় পাঁচটি পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এগুলো হলো বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, প্রতিষ্ঠান, অর্থের সংস্থানকারী ও জনগণ। এ পক্ষগুলো এক না হলে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। সিলেটে পানি বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুসহ এমন কোনো কিছু নেই যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নেই। এসব গল্প জানাতে না পারার কারণে আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তা পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘ভবদহের মতো ভয়াবহ জলাবদ্ধতা যখন হয়, তখন পত্রিকাগুলোয় তা প্রকাশ পায়। কিন্তু মৌসুম শেষ হলে বিষয়টি গুরুত্ব হারায়। অথচ ভবদহ জলবায়ু পরিবর্তনের বড় উদাহরণ। বাংলাদেশে এ ধরনের হাজারো ঘটনা রয়েছে, যেগুলো আলোচনায় আসে না।’
জলবায়ু পরিবর্তনের উদাহরণ টেনে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ এতটাই ভয়াবহ যে এটি একটি জনপদকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। তাই আমরা জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ আনার চেষ্টা করছি। এজন্য আমাদের ক্ষয়ক্ষতির গল্পগুলো গণমাধ্যমে উঠে আসা উচিত।’
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, ‘এ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিপদ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এ নিয়ে সারা বিশ্বে অ্যাক্টিভিজমের অভাব রয়েছে। এজন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের ও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব একেএম সোহেল উপস্থিত ছিলেন।