সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমে মিস্টি পানির স্বাদে রূপান্তর

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
হঠাৎ করে লবণাক্ত হয়ে যাওয়া ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমে মিস্টি পানির স্বাদে রূপান্তর হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরেছে। বৃষ্টি না হলেও আগামী পুর্ণিমার জোঁতে স্বাভাবিক হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক মিয়া। তিনি জানান, এপ্রিলের শুরুতে পুর্ণিমার জোয়ারে সাগরের লবণ পানি ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির চাপ কম থাকায় প্রবেশ করায় পানি লবণাক্ত হয়ে যায়। ইতিপুর্বে পানিতে কিছুটা লবণাক্ততা ছিলো কিন্তু তা ছিলো ক্ষতিসীমার নীচে। নদীর পানি লবণাক্ত হলেও পার্শবর্তি পুকুর, খাল ও ডোবার পানি স্বাভাবিক ছিলো। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমে স্বাভাবিক না হলে তা দিয়ে সেচ কাজ না করে পুকুর, খাল ও ডোবার স্বাভাবিক পানি দ্বারা সেচসহ অন্যান্য কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলো জেলা কৃষি বিভাগ। ক্রমান্বয়ে লবণাক্ততা কমে চলতি পুর্ণিমার জোয়ারের পানিতে পুরোপুরি স্বাভাবিক মিস্টি স্বাদের পানিতে রূপ নেয় সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করেই সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষরা পানি লবণাক্ততা অনুভব করতে শুরু করেন। নদী তীরবর্তী মানুষ দৈনন্দিন কাজে এ নদীর পানি ব্যবহার করলেও এখন তা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব হচ্ছিলো না। আর মিঠাপানির এ দুটো নদীতে যে কিছুটা লবণাক্ততা ছিলো তা নিশ্চিত করেছেন পরিবেশবিদরাও। বিশেষ করে ২০২০সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ নদীর পানিতে তড়িৎপরিবাহিতা (ঊষবপঃৎরপধষ ঈড়হফঁপঃরারঃু-ঊঈ) অনেক কম থাকলেও গত মার্চ মাসে বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এমনকি গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে পানির তামপাত্রাও বেড়েছে। আর এসব হিসাবে গেলো বছর করোনাকালে বেশ ভালো ছিলো নদীর পানি।
বিশেষজ্ঞদের মতে শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি কম প্রবাহিত হওয়া এবং বৃষ্টিপাত না হওয়া, দূষণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সুগন্ধা ও বিষখালী মতো মিঠা নদীর পানিও এখন লবণাক্ত হয়ে উঠেছে।
বিষখালী ও সুগন্ধা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীলদের মতে, চলতি এপ্রিল মাসের শুরুতে পূর্ণিমার জোয়ারে আসা সাগরের পানি থেকেই নদীর পানিতে লবণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পৌর মিনি পার্ক ও ডিসি পার্ক সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে গোসল করতে গিয়ে অনেকেই পানি মুখে দিয়ে লবণের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে ভ্রুক্ষেপ না করলেও, পুরাতন কলেজ খেয়াঘাট থেকে স্থানীয় দোকানিরা চায়ের পানি সংগ্রহ করতে গেলে তাতেও লবণের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। আর এরপর থেকেই নদীর পানি হঠাৎ করেই লবণাক্ত হওয়ার বিষয়টি লোকমুখে ছড়িয়ে পরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বেশ শোরগোল শুরু হয়ে যায়। চায়ের দোকানি সোহেল রানা জানান, প্রথমে নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে ওঠার কথা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে শুনেছেন। পরে তিনি নিজেও মুখে নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম জানান, প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিলো শহরের ভেতর থেকে বয়ে আসা বাসন্ডা খালের কাঠপট্টি খালের মুখের পাশের জায়গাতে নদীর পানি লবণাক্ত। তাই এটা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলো অনেকে। পরে বিভিন্নস্থান থেকে নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরে। এমনকি এক চায়ের দোকানি একদিন নদী থেকে পানি এনে চা বানাতে গিয়ে তাতে লবণের উপস্থিতি পেয়ে ফেলে দিতে বাধ্যও হন। স্থানীয় যুবকরা বলছেন, শুধু পানি লবণই নয়, গোসল করার পর চুলগুলো কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, যা আগে হয়নি।
তবে গত কয়েকদিন ধরে পানিতে লবণাক্ততার উপস্থিতি একদম নেই বললেই চলে। স্বাভাবিক মিস্টি পানির স্বাদে রূপন নিয়েছে ঝালকাঠির প্রধান দুটি নদী সুগন্ধা ও বিষখালী। সেই পূর্বের মতোই এখন প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন নদী তীরের বাসিন্দারা।
তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে দুপুরে অনেকে গোসলও করছেন নদীর পানিতে। কৈশোরদের দুরন্তপনার বিষয়টিও লক্ষ্য করা গেছে।