বছরজুড়ে মসজিদ থাকুক প্রাণবন্ত: মাহমুদ আহমদ

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
মাগফিরাতের দশকের পঞ্চম দিন আমরা অতিবাহিত করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এ দোয়াই করি তিনি যেন আমাদেরকে সুস্থ রেখে পুরো রমজান তার ধ্যানে কাটানোর তৌফিক দান করেন।
একটি বিষয় লক্ষ্য করে দেখেছি, সারা বছর যারা ইবাদত বন্দেগিতে যতটা আগ্রহি না তারাও রমজান মাসে ইবাদতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়। যারা কোন দিন মসজিদ মুখি হয় না তারাও রমজান মাসে মসজিদে কমপক্ষে দৈনিক একবার হলেও আসেন। এই ভালোগুণটিকে আমাদের জীবিত রাখতে হবে।
নামাজের সময় মসজিদগুলো নামাজিতে ভরপুর থাকে। নামাজের পর মুসল্লিরা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করছেন। পবিত্র কুরআনের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। ইফতারের আগে মসজিদগুলো ভরে যায় রোজাদারের দ্বারা। শত শত রোজাদার একত্রে বসে ইফতারের আয়োজন হচ্ছে। একজন আরেকজনের থালায় ইফতার তুলে দিচ্ছে আবার কেউ শত শত মুসল্লির জন্য ইফতারে ব্যবস্থা করে প্রশান্তি পাচ্ছে।
আসলে পুরো পরিবেশটাই যেন শান্তিময় হয়ে উঠে। কিন্তু রমজান শেষ হওয়া মাত্রই মসজিদগুলো যেন খালি হয়ে যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেও আর সেই মুসল্লিদের পাওয়া যায়না। আর যার নামাজে আসেন তারাও নামাজ শেষ হওয়া মাত্রই চলে যান। সারাদিনই মসজিদ বিরান হয়ে পড়ে থাকে।
আসলে ইবাদতবন্দেগী শুধু একমাসের জন্য নয় বরং শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত আমাদেরকে ইবাদত করে যেতে হবে। তাই শুধু রমজানে মসজিদে আসলাম আর পরবর্তী বছরের রমজানের জন্য অপেক্ষা করব তা কিন্তু ঠিক নয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মহা প্রতাপশালী খোদা বলবেন, উপস্থিত সকলে অচিরেই জানতে পারবে যে, কে মর্যাদাবান ও সম্মানিত। কেউ একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল (সা.)! মর্যাদাবান এবং সম্মানিত কে? তিনি (সা.) বললেন, মসজিদ সমূহে যারা খোদার স্মরণে একত্রিত হয়।’
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যায় আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর উপকরণ সৃষ্টি করেন’ (বোখারি)।
আমরা সবাই জানি, আমাদের প্রিয় নবী (সা.)এর মসজিদ ছিল অতি সাধারণ খেজুর পাতার কিন্তু তাতে প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা আর শান্তির কোন কমতি ছিল না। বৃষ্টি পড়লে মসজিদে পানি ঢুকে কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়া সত্বেও মুসল্লিদের দ্বারা মসজিদ সব সময় থাকত ভরপুর।
সামান্য খেঁজুর পাতায় নির্মিত মসজিদের সোভা ও সৌন্দর্যে যেন ঝকমক করত। এর কি কারণ ছিল? এর কারণ একটাই, আর তাহল আমাদের প্রিয় নবী ও সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর উত্তম আদর্শ এবং তাকওয়ায় সুশোভিত তার পবিত্র সাহাবিগণ।
মহানবী (সা.)এর মসজিদ ছিল সবার জন্য শান্তি আর নিরাপত্তার কেন্দ্র। সেই খেঁজুর পাতার মসজিদের রূপের সঙ্গে কোন মসজিদের কি তুলনা হতে পারে? মহানবী (সা.)এর মসজিদ ছিল সমাজের সকল শ্রেণির শান্তির কেন্দ্র আর সেই মসজিদ থাকতো সব সময় লোকে লোকারণ্য।
তাই আমরাও পারি মসজিদের হক আদায় করতে এবং মসজিদকে আবাদ করতে। আমরা যদি পুরো পরিবার নিয়ে মসজিদমুখী হই তাহলে সমাজ থেকেও নানান অপকর্ম দূর হয়ে যাবে আর আমাদের সন্তানরাও ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকেও রেহাই পাব।
পবিত্র রমজানে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের যে অভ্যাস রপ্ত করছি তা আমাদের বছর জুড়ে অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মসজিদের হক আদায় করার সৌভাগ্য দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]